রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩
খবর
নাটোর রাজবাড়ী ও রাজ পরিবারের ইতিহাস
2023-01-16 00:05:05
বিশেষ প্রতিনিধি

নাটোর ঘুরে এসে গোলাম নবী খোকনের প্রতিবেদনঃ 

 

প্রাচীন ঐতিহ্য ও প্রত্নতান্ত্রিক নির্দশনের কেন্দ্র ভূমি নাটোর জেলা। 

নাটোর জেলার অনেক ঐতিহাসিক নির্দশনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য, রানী ভবানীর স্মৃতি বিজরিত নাটোর রাজবাড়ী। ঐতিহাসিকদের মতে অষ্টাদশ শতকের শুরুতে নাটোর রাজ বংশের উৎপত্তি হয়। 

উত্তর বঙ্গের জমিদারগণের মধ্যে নাটোর রাজ বংশ মান মর্যাদা, ঐতিহ্য, জনহিতকর কাজে ও বিষয় সম্পতিতে অগ্রগন্য ছিলেন। ঐতিহাসিকদের মতে ১৭০৬ খৃষ্টাব্দে পরগনা বানগাছির বিখ্যাত জমিদার গনেশ রাম রায় ও ভবানী চরন চৌধুরী রাজস্ব প্রদানে ব্যর্থ হওয়ায় জমিদারীচ্যুত হন। 

দেওয়ান রঘুনন্দর উক্ত পরগনা নিজ ভ্রাতা রামজীবনের নামে বন্দোবস্ত দেন। এভাবেই নাটোর রাজ বংশের পত্তন হয়। 

রাজা রামজীবন নাটোর রাজ বংশের প্রথম রাজা হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। ১৭০৬ মতান্তত্তে ১৭১০  খৃষ্টাব্দে। তারপর তিনি ১৭৩৪ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন। এবং সে বছরেই মৃত্যুবরন করেন। 

রাজা রামজীবনের মৃত্যুর পর দত্তক পূত্র রাম কান্ত নাটোরের রাজা হন। উল্লেখ্য, রাজা রামজীবনের সময় থেকে দেওয়ান দয়া রাম (দিঘা পতিয় রাজ বংশের প্রতিষ্ঠাতা) নাটোরে ও জমিদারী তত্ত্বাবধান করতেন। ১৭৪০ খৃষ্টাব্দে রানী ভবানীর সাথে রাম কান্ডের বিবাহ হয়।

১৭৪৮ খৃষ্টাব্দে  রাজা রাম কান্ডের মৃত্যুর পর নবাব আলী বর্দি খাঁ, রানী ভবানীর উপর এ জমিদারী পরিচালনার ভার অর্পণ করেন। 

জানা যায়, এ মহিয়সী নারী বগুরা জেলার আদমদিঘীর ছাতিনা গ্রামে বাংলা ১১২২ সালে জম্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছিল আত্তারাম চৌধুরী ও মাতার নাম জয় দূর্গা। 

রানী ভবানীর রাজত্বকালে নাটোরের জমিদারী ব্যপক বিস্তার লাভ করে। বর্তমান রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, কুষ্টিয়া,  যশোর, রংপুর এবং ভারতের পশ্চিম বঙ্গের মুর্শিদাবাদ, বীরভূম ও মালদহ ইত্যাদি জেলাব্যাপী বিস্তৃত ছিল নাটোর রাজার জমিদারী।

অর্ধেক বংশের রাজত্ত্ব করতেন রানী ভবানী, তাই তাহাকে বলা হতো  অর্ধবঙ্গেশনী। ১৮০২ সালে রানী ভবানীর মৃত্যুর পর তার দত্তক পূত্র রাম কৃষ্ণ জমিদারীর দায়িত্বভার গ্রহন করেন। 

বাংলা ১২০৩ সালে তার মৃত্যুর পর রাজা বিশ্বনাথ এবং রাজা শিবনাথ এই দুই ভাই এর মধ্যে জমিদারী বন্টন হয়ে যায়। রাজা বিশ্বনাথ বড় তরফ এবং রাজা শিবনাথ ছোট তরফ হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন। রাজা বিশ্বনাথের বংশ পরস্পরা হিসাবে যথাক্রমে রাজা গোবিন্দ চন্দ্র (দত্তক),  মহারাজা জগনীন্দ্র নাথ ও কুমার যোগেন্দ্রনাথ বড় তরফের জমিদারী দেখাশোনা করেন। অন্য দিকে রাজা শিবনাথের বংশ পরস্পরা হিসাবে রাজা আনন্দ নাথ, চন্দ্র নাথ, যোগেন্দ্রনাথ, জিতেন্দ্র নাথ ও কুমার বীরেন্দ্র নাথ ছোট তরফের জমিদারী পরিচালনা করেন। তবে রানী ভবানীর পরবর্তী বংশধরদের মধ্যে মহারাজা জননীন্দ্রনাথ সর্বাপেক্ষা সমাজসেবী, জনদরদী জমিদার হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন। 

বর্তমানে নাটোর রাজবাড়ী টি শহরের কেন্দ্রস্থলে কিংবন্তীর কাহিনী স্মৃতি বিজড়িত হয়ে আছে। এলাকাটির মোট আয়োতন ১২০ একর। 

তৎকালীন সময়ে নিরাপত্তার জন্য খনন কৃত দুটি স্তরে পানি বেষ্টিত গভীর লেক রয়েছে। এ ছাড়া মোট ৫ টি বড় আকারের পুকুর আছে। রাজ বাড়ীর পুরো এলাকাটি দুটি অংশে বিভক্ত। একটি ছোট তরফের অন্যটি বড় তরফের। জমিদার আমলের ছোট বড় প্রায় সাত থেকে আটটি ভবন এখানে বিদ্যমান রয়েছে। বিশাল রাজবাড়ীর জলবেষ্টিত পাখিরা, পুকুর বিভিন্ন ধরনের গাছপালা, নিরিবিলি পরিবেশ এবং সেই সাথে এর ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ রাজবাড়ীর প্রধান আকর্ষন। 

রাজবাড়ীর পুরো এলাকাটি রানী ভবানীর কেন্দ্রীয় উদ্যান, যুবপার্ক হিসাবে জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া রয়েছে নাটোরের ঐতিহ্যবাহী কাঁচা গোল্লা। আরও আছে অর্জিনিয়াল খেঁজুরের রস, খেঁজুরের গুড়, জোল গুর, পাটালী গুড় ও মরিচার গুড়। 

এখানে রয়েছে পানের বরজ, পেয়ারা বাগান, লিচু বাগান, আম বাগান, গম চাষ, সরিষা চাষ সহ কি না আছে। আর যাকে কেন্দ্র করে যাওয়া তার নাম তার আহম্মদ উল্লাহ, গ্রাম বাইগারচর, মতলব উত্তর, চাঁদপুর। তার দুটি বোন বিয়ে দিয়েছে নাটোরের লালপুর থানার কদিমছিলান ইউনিয়নের ধলা গ্রামে। উল্লেখ্য, এই লালপুর থানাটিতে দেশের সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়। আর সারি সারি খেজুর গাছ থেকে গাছিরা বছরের প্রায় পাঁচ মাস খেজুরের রস সংগ্রহ করেন এবং প্রায় প্রতিদিন খুব সকালে বিশাল বড় চুলা ও বড় ট্রে এর মধ্যে খেজুর রস থেকে খেজুর গুড় তৈরি করেন, যেটা একটা কুটির শিল্প বলা যায়, পরিবারের সকল সদস্যরাই এই কাজে সহযোগিতা করেন। এই যজ্ঞ তথা খেজুর রস থেকে এই গুড তৈরি করার প্রক্রিয়া স্বচক্ষে না দেখলে তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে।

আর দুই বোনের শশুর বাড়ি হওয়ার  সুবাদে আহম্মদ উল্লাহ সেখান গিয়ে  নিজে দেখে শুনে ও পূর্বেই অর্ডার দিয়ে গৃহস্তের নিজ হাতে তৈরিকৃত গুড় কিনে এনে মতলব উত্তরের বিভিন্ন বাজারে সুলভ মূল্যে বিক্রি করে আসছেন। গুড় আসলেই অর্জিনিয়াল। এতে কোন ভেজাল নাই। নরমাল দোকানের দাম থেকে একটু বেশী দিয়ে নিতে হয় কারণ এতে কোন ধরনের ভেজাল নেই কারণ বাণিজ্যিকভাবে এগুলো কারখানায় তৈরিকৃত নয়, ভেজালের ও সুযোগ নেই। এ ভ্রমণের সাথে ছিলেন আরেকজন প্রিয় মূখ বাংলা নিউজ ২৪ ডট টিভি'র চেয়ারম্যান ও নিশ্চিন্তপুর ডিগ্রি কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আলআমীন পারভেজ। সত্যিই, নাটোর জেলার ইতিহাস ঐতিহ্য ও ভ্রমণ অনেকদিন মনে রাখার মতো।