ফেসবুকের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনীয়তা লঙ্ঘন সংক্রান্ত তদন্ত শেষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটিকে ৫০০ কোটি ডলার জরিমানা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। প্রাক্তন বৃটিশ রাজনৈতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকার কাছে অনৈতিকভাবে ৮ কোটি ৭০ লাখ ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য চলে যাওয়ার অভিযোগের তদন্ত শেষে এই জরিমানারা অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি)। এফটিসির সদস্যদের মধ্যে ৩-২ ভোটে এই জরিমানার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে এ খবর দিয়েছে বিবিসি।
খবরে বলা হয়, গত বছর ফেসবুকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে, ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা অনৈতিকভাবে তাদের লাখ লাখ ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহ করেছে ও গত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডনাল্ড ট্রাম্পের শিবিরকে নির্বাচনী পরামর্শ দিতে ওই তথ্য কাজে লাগিয়েছে। ফেসবুক ব্যবহারকারীদের তাদের ব্যক্তিত্বের ধরণ বিষয়ক একটি ‘কুইজ অ্যাপে’ অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা। এর মাধ্যমে অংশগ্রহণকারী ও তাদের বন্ধুদের তথ্য অনৈতিকভাবে লুটে নেয় তারা। পরে এই কেলেঙ্কারি নিয়ে বিশ্বজুড়ে একাধিক তদন্ত শুরু হয়। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যে ৫ লাখ ইউরো জরিমানার শিকার হয় ফেসবুক।ওই কেলেঙ্কারির জের ধরে গত বছরের মার্চ মাসে তদন্ত শুরু করে এফটিসি। ওই তদন্তের নিষ্পত্তি হিসেবেই এই জরিমানা করা হয়। ফেসবুক ও এফটিসির কাছে এ জরিমানার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তারা কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। এফটিসির তদন্তের মূল লক্ষ্য ছিল, ফেসবুক ২০১১ সালে স্বাক্ষর করা ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা বিষয়ক একটি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে কি না তা খুঁজে বের করা। ওই চুক্তি অনুসারে, ফেসবুক কোনো ব্যবহারকারীর তথ্য তৃতীয় পক্ষের সঙ্গে শেয়ার করতে হলে ব্যবহারকারীকে এ বিষয়ে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে তার অনুমতি নিতে হবে।
তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক সূত্র ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে তদন্তের নিষ্পত্তির বিষয়ে জানিয়েছে, শুক্রবার ফেসবুকের বিরুদ্ধে ৩-২ ভোটে ৫০০ কোটি ডলার জরিমানা করেছে এফটিসি। এর মধ্যে এই জরিমানার পক্ষে ছিলেন রিপাবলিকান কমিশনাররা ও বিপক্ষে ছিলেন ডেমোক্র্যাটরা। ডেমোক্র্যাটদের দাবি ছিল, এই জরিমানা অপর্যাপ্ত। তবে এখনো জরিমানাটি চূড়ান্ত হয়নি। মার্কিন বিচার বিভাগের সিভিল ডিভিশন জরিমানার বিষয়টি চূড়ান্ত করবে। চূড়ান্ত হতে ঠিক কতদিন লাগবে তা অনিশ্চিত।
জরিমানার খবরেও বেড়েছে শেয়ারের দাম
এদিকে, ফেসবুক জরিমানার সম্মুখীন হলেও প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারে কোনো দরপতন হয়নি, উল্টো ১.৮ শতাংশ বেড়েছে। চলতি বছরের এপ্রিলে ফেসবুক তাদের বিনিয়োগকারীদের বলেছিল, তারা ৫০০ কোটি ডলার জরিমানা প্রত্যাশা করছে। চূড়ান্ত হলে এফটিসি কর্তৃক কোনো প্রযুক্তি-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের ওপর সবচেয়ে বড় জরিমানার দৃষ্টান্ত হবে এটি। প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক লাভের এক-চতুর্থাংশ এই জরিমানার পরিমাণ। কিন্তু ফেসবুক তাদের বিনিয়োগকারীদের আগেই এ বিষয়ে সতর্ক করে রেখেছে। জানিয়েছে, ওই অর্থ তারা আগ থেকেই প্রস্তুত রেখেছে। সমস্যা হবে যদি, জরিমানার সঙ্গে নতুন কোনো নিষেধাজ্ঞা বা কড়াকড়ি আরোপ করা হয় তখন।